আপনার ত্বক কি সবসময় শীতের মতো রুক্ষ-শুষ্ক, বিবর্ন-প্রাণহীন দেখায় !  বয়সের আগেই রিংকেল বা বলিরেখা উঁকি দিচ্ছে মুখে! শুষ্ক ত্বকের যত্ন নিতে সমাধান খুঁজছেন প্রসাধনীতে! তাহলে আমাদের এই লেখাটি আপনার জন্য।

Dey skin cosmetics ingredients

শুষ্ক ত্বক :

এরুপ ত্বকে স্বাভাবিক ত্বকের চেয়ে তেলের পরিমাণ কম থাকে কিন্তু পানির পরিমান অনেক বেশি কম থাকে। শুষ্ক ত্বকে খুব সহজেই ক্র্যাক বা ফাটল ধরে, ফলে জীবাণুর আক্রমণটা সহজ হয়।

শুষ্ক ত্বকে সেবাম সমভাবে না ছড়িয়ে ড্রপলেট আকারে স্থানে স্থানে পুঞ্জিভূত থাকে। ফলে ত্বকে আল্ট্রভায়োলেট রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব বেড়ে যায়।

আল্ট্রভায়োলেট রশ্মি আমাদের ত্বকের ডার্মিস স্তরের কোলাজেন তন্তুর কার্যকারিতায় বিঘ্ন ঘটায়। কোলাজেন তন্তু আমাদের ত্বককে টানটান রাখে,ত্বকে বয়সের ভাঁজ পড়তে না দিয়ে ত্বকের তারুণ্য ধরে থাকে।

কিন্তু আল্ট্রভায়োলেট রশ্মি কোলাজেন তন্তুকে ধ্বংস করে আমাদের ত্বককে বুড়িয়ে ফেলে। তাই রূপ-লাবণ্য ফুটিয়ে তোলা ও চেহারায় তারুণ্য ধরে রাখার জন্য শুষ্ক ত্বকের সুস্থতা ও নিয়মিত পরিচর্যা অপরিহার্য্য।

শুষ্ক ত্বকের যত্নে কেমন প্রসাধনীতে ব্যবহার করা উচিত, ব্যবহৃত প্রসাধনীতে কোন উপাদান গুলি থাকা উচিৎ তা বুজতে হলে প্রথমে শুষ্ক ত্বকের কারণকে বিশ্লেষণ করতে হবে।

শুষ্ক ত্বকের কারণঃ

আমাদের ত্বকের প্রায় ৬৭% পানি। চিকিৎসা-বিজ্ঞানের পরিভাষায় আমাদের শরীরে যে পরিমাণ পানি আছে তার ১৫-২০ শতাংশ এপিডার্মিসের স্ট্র্যাটাম  কর্নিয়ামে  থাকে।

কোন কারণে যদি স্ট্র্যাটাম কর্নিয়ামের পানি ১০ শতাংশের নিচে নেমে যায় তাহলে চিকিৎসা-বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা যায় যে ত্বক শুষ্ক হয়ে গেছে।

ত্বকের এ শুষ্কতা পানির অভাবে হয় না বরং ত্বকের কোষগুলির পানি ধরে রাখতে পারার গাঠনিক ত্রুটির কারণে হয়ে থাকে। স্ট্র্যাটাম করনিয়াম আসলে আমাদের ত্বকে একটি ব্যারিয়ার বা দেয়াল রুপে কাজ করে, যা এপিডার্মিস থেকে পানি বের হয়ে যেতে বাঁধা দিয়ে ত্বকের আদ্রতা নিয়ন্ত্রন করে।

এ দেয়ালের মূল উপাদান হিসেবে আছে কিছু লিপিড বা চর্বি জাতীয় পদার্থ, যা ভেদ করে সাধারণত পানি যেতে পারে না। এই লিপিড বা চর্বিগুলি মূলত আসে সেবাম ও স্ট্র্যাটাম কর্নিয়ামের মৃত কোষগুলির মধ্যে জমে থাকা অয়েল মলিকলস থেকে।

যেমন –সিরামাইড। বয়সের সাথে সাথে আমাদের তৈল গ্রন্থিগুলির তেল উৎপাদন ক্ষমতা কমে যায়। ফলে আমাদের লিপিডের দেয়ালগুলি দুর্বল হয়ে ত্বক শুষ্ক হয়ে পরে। জীনগত কারণেও অনেকসময় তৈল গ্রন্থি প্রয়োজনের তুলনায় কম থাকে।

এছাড়াও পরিবেশে যখন বাতাসের আদ্রতা কমে যায়, তখন প্রাকৃতিকভাবেই আমাদের ত্বকের পানি পরিবেশে চলে যায়, ফলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়।

শুষ্ক ত্বকের প্রসাধনীর প্রয়োজনীয় উপাদান সমূহ
শুষ্ক ত্বকের প্রসাধনীর প্রয়োজনীয় উপাদান সমূহ

শুষ্ক ত্বকের যত্ন নেওয়ার প্রয়োজনীয় উপাদান সমূহ

ড্রাই স্কিনের সবচেয়ে ভাল বন্ধু হল ময়েশ্চারাইজার। তাই এই ধরনের ত্বকের প্রসাধনীতে শুধুমাত্র তেল বা পানি যুক্ত উপাদানগুলি যুক্ত করলেই হবে না পানি যেন বাষ্পীভূত হয়ে উড়ে যেতে না পারে সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। মূলত এই কৌশলকেই সামনে রেখেই শুষ্ক ত্বকের প্রসাধনীর উপাদানগুলো নির্বাচিত করা হয়। আপনি যদি শুষ্ক ত্বকের অধিকারী হোন, তবে প্রসাধনী ক্রয়ের পুর্বে নিশ্চিত হয়ে নিন আপনার প্রসাধনীতে নিচের উপাদানগুলি আছে কিনা।

গ্লিসারিন :

শুষ্ক ত্বকের যত্ন নিতে গ্লিসারিনেরে জুড়ি মেলা ভার। এই ধরণের ত্বকে গ্লিসারিন মূলত হিউমেকটেন্ট হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ এটি পরিবেশ থেকে পানি টেনে আনে ত্বককে শুষ্কতার হাত থেকে রক্ষা করে।

হায়ালুরনিক এসিডঃ

হায়ালুরনিক এসিড এমন একটি পদার্থ যা আমাদের দেহে প্রাকৃতিক ভাবেই পাওয়া যায়। এটি আমাদের ত্বককে হাইড্রেট করে,আমদের ত্বকের ময়েশ্চারাইজার ব্যারিয়ারকে শক্তিশালী করে ত্বকে পানির অপচয় রোধ করে কোলাজেন ও ইলাস্টিন তন্তুর কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে আমাদের ত্বকের বলিরেখা দূর করে। এই কারনে শুষ্ক ত্বকের প্রসাধনীতে হায়ালুরনিক এসিড খুব গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে আছে।

শুষ্ক ত্বকের প্রসাধনীর প্রয়োজনীয় উপাদান সমূহ ...

সিরামাইডঃ

সিরামাইড হল ত্বকের আদ্রতা রক্ষাকারি দেয়ালের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ত্বকে  সিরামাইডের অভাব হলে এপিডার্মিসের ময়েশ্চার ব্যারিয়ার দুর্বল হয়ে যায়,ফলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। এই কারনে শুষ্ক ত্বকের প্রসাধনীতে সিরামাইড খুব গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয়।

ভ্যাসলিন, পেট্রোলিয়ামঃ

ড্রাই বা শুষ্ক ত্বকের প্রসাধনীর সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত উপাদান হল পেট্রোলিয়াম জেলী। এটি ত্বকের এপিডার্মিসে একটি পুরো স্তর সৃষ্টি করে যা ত্বক থেকে পানি বের হতে দেয় না,আবার পানি প্রবেশ করতেও দেয় না।

নারিকেল তেলঃ

শুষ্ক ত্বকের প্রসাধনীতে নারকেল তেলের গুরুত্ব অপরিসীম। নারকেল তেল ত্বকের সেবাম উৎপাদনকে নিয়মিত করে, ত্বকের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে ত্বকের সংক্রমণ প্রতিরোধ করে, ত্বকের জ্বালাপোড়া কমায়।

Shop with Water Lotus

ইউরিয়াঃ

মূলত হিউমেকটেন্টস পরিবেশ থেকে আদ্রতা শুষে আমাদের এপিডার্মিসে নিয়ে  আসে।তাছাড়া অসমোসিস প্রক্রিয়ায় এগুলো ত্বকের ডার্মিস থেকে পানি টেনে এপিডার্মিসে ধরে রাখার মাধমে ত্বকের শুষ্কতা দূর করে।

এছাড়াও শুষ্ক ত্বকের প্রসাধনীতে জোজবা,আর্গান,অ্যাভাকেডো সহ নানারকমের তেল উপাদান হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। ভিটামিন ই, ল্যাকটিক এসিড, সেহা বাটার ইত্যাদি উপাদান শুষ্ক ত্বকের প্রসাধনীতে বেছে নিতে পারেন। 

তথ্যসুত্র:

https://www.dermadoctor.com/blog/top-5-dry-skin-skincare-ingredients/