মানুষ সৌন্দর্য্যপ্রিয়। সৌন্দর্য্য সচেতন মানুষ মাত্রই সর্বাগ্রে যে বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করেন, তা হল ত্বকের সৌন্দর্য্য।
সেই প্রাচীন কাল থেকেই ত্বককে সৌন্দর্য্যময় করে রাখার জন্য আমাদের প্রচেষ্টার কোনো কমতি নেই। কিন্তু আমাদের সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায় শুধু মাত্র ত্বক, ত্বকের গঠন ও ধরন সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারনার অভাবে।
আমাদের আজকের এই লেখাটি ত্বক ,ত্বকের গঠন ও ধরন সম্পর্কে।
ত্বকের গঠনঃ
চিকিৎসা-বিজ্ঞানের পরিভাষায় আমাদের ত্বকে এপিডার্মিস, ডার্মিস ও হাইপো-ডার্মিস নামে তিনটি স্তর রয়েছে। এপিডার্মিস হচ্ছে ত্বকের সর্ববহিস্থঃ স্তর যা স্ট্যাটাম কর্নিয়াম সহ আরো পাঁচটি উপস্তরে বিভক্ত।
স্ট্যাটাম কর্নিয়াম হলো এপিডার্মিসের সর্ববহিস্থঃ স্তর যা স্কিন হিসেবে আমরা খালি চোখে দেখে থাকি এবং এই স্তরেই আমরা প্রসাধনী/ কসমেটিকস প্রয়োগ করে থাকি।
এই স্তরটি আবার ১৫-২০ টি কোষের স্তর নিয়ে গঠিত এবং এই কোষগুলি ত্বকের দৃঢ়তা-প্রদানকারী ক্যারাটিন নামক বর্নহীন প্রোটিনে ভরপুর।
এপিডার্মিসের স্ট্র্যাটাম বেজেলিতে রয়েছে মেলানোসাইট ও মেলানিনঃমেলানোসাইট কোষ, যাদের কাজ হল ত্বকের কালো বর্নের জন্য দায়ী মেলানিন নামক রঞ্জক পদার্থ তৈরী করা।
এছাড়াও এপিডার্মিসের কোষগুলিতে ক্যারাটিন নামক রঞ্জক পদার্থ রয়েছে যা আমাদের ত্বকের হলুদ বা উজ্জ্বল বর্নের জন্য দায়ী।
Shop With Water Lotus
এপিডার্মিসে কোনো রক্ত নালী নেই, এই স্তর ডার্মিস থেকেই পুষ্টি সংগ্রহ করে। ডার্মিস, এপিডার্মিসের ঠিক নিচেই থাকে।
এতে রয়েছে হেয়ার-ফলিকলস বা চুলের গোঁড়া, তেল গ্রন্থি, ঘর্ম গ্রন্থি, তারুন্য ধরে রাখার ইলাস্টিন ও কোলাজেন তন্তু সহ নানাবিধ উপাদান।
ডার্মিসের তৈল-গ্রন্থি থেকে তেল জাতীয় পদার্থ নিঃসরিত হয় যা সেবাম নামে পরিচিত। সেবাম ত্বকের আদ্রর্তা ধরে রাখে, ত্বক কোমল করে এবং ত্বকের ধরন নির্ণয়ে গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা পালন করে।
ত্বকের ধরনঃ
ত্বকের ধরন সবসময় একইরকম থাকেনা। পরিবেশগত পরিবর্তন, হরমোনজনিত শারীরিক পরিবর্তন এবং প্রসাধনীর ভুল প্রয়োগ সহ নানাবিধ কারনে ত্বকের ধরনে পরিবর্তন আসতে পারে।
কিন্তু জন্মগতভাবে বা বায়োলজিক্যালি আমাদের ত্বকের ধরন কেমন হবে তা নির্ভর করে ত্বকের সেবাম ( অয়েল কন্টেন্ট) এবং আদ্রর্তার (ওয়াটার কনটেন্ট) পরিমাণগত ভারসাম্যের উপর।
ত্বকে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত তেল ও পানির উপস্থিতির উপর ভিত্তি করে ত্বককে চারভাগে ভাগ করা হয়েছে।
- স্বাভাবিক(Normal skin)
- তৈলাক্ত ত্বক ( oily skin)
- শুষ্ক ত্বক ( Dry skin)
- মিশ্র ত্বক ( Combination skin)
স্বাভাবিক ত্বকঃ
এ ধরনের ত্বকে তেল ও পানির পরিমাণগত ভারসাম্য বজায়ে থাকে। এই ধরনের ত্বক খুব শুষ্কও নয়, খুব তৈলাক্তও নয়। নর্মাল বা স্বাভাবিক ত্বকের ক্ষেত্রে ক্রীমজাতীয় প্রসাধনী ব্যবহার করা উচিত। কারন ক্রীমে তেল ও পানির পরিমাণ কাছাকাছি থাকে।
তৈলাক্ত ত্বকঃ
তৈলাক্ত ত্বকে পানির তুলনায় তেলের পরিমান বেশি থাকে। মুখে একধরনের তৈলাক্ত ও চিটচিটে ভাব থাকে। ত্বকে বড় ও সুস্পষ্ট লোমকুপ দেখা যায়।
তৈলাক্ত ত্বকের ক্ষেত্রে জেল জাতীয় প্রসাধণী ব্যবহার করা উচিত কারন জেলে পানির পরিমাণ বেশি থাকে।
শুষ্ক ত্বকঃ
এ ধরনের ত্বকে স্বাভাবিক ত্বকের চেয়ে তেলের পরিমাণ কম থাকে কিন্তু পানির পরিমাণ খুব কম থাকে। শুষ্ক ত্বকের জন্য লোশন বা তেল জাতীয় প্রসাধনি ব্যবহার করা উচিত।
মিশ্রত্বকঃ
মিশ্র ত্বকের ক্ষেত্রে মুখের টি-জোন মানে কপাল নাক ও থুতনীর অংশ তৈলাক্ত থাকে আর সি-জোন মানে গাল, মুখ বা চোখের পার্শ্ববর্তী অংশ শুষ্ক থাকে। মিশ্র ত্বকের ক্ষেত্রে শুষ্ক অংশে লোশন এবং তৈলাক্ত অংশে ক্রীম জাতীয় প্রসাধনী ব্যবহার করা উচিত।
Shop with Water Lotus
তথ্যসুত্রঃ
ছবিঃ goggle free image
https://en.wikipedia.org/wiki/Human_skin
https://www.webmd.com/beauty/whats-your-skin-type#1
https://int.eucerin.com/about-skin/basic-skin-knowledge/skin-types