ত্বক নিয়ে আমাদের চিন্তার শেষ নেই, আয়োজনেরও কমতি নেই। তবে সুস্থ ও সুন্দর ত্বকের জন্য আমাদের সকল আয়োজন ব্যর্থ হয়ে যায়, ত্বকের ধরন না বুঝে পরিচর্যার জন্য। বায়োলজিক্যালি আমাদের ত্বকের ধরন কেমন হবে তা নির্ভর করে, ত্বকের সেবাম (অয়েল কনটেন্ট) ও আদ্রর্তার (ওয়াটার কনটেন্ট) পরিমানগত ভারসাম্যের উপর।
এর উপর ভিত্তি করে ত্বককে স্বাভাবিক, শুষ্ক, অয়েলি এবং মিশ্র এই চার ভাগে ভাগ করা হয়। এই চার ধরনের ত্বকের মধ্যে নিজের ত্বকের ধরন বোঝার সহজ কিছু পদ্ধতি নিয়েই আমাদের আজকের এই লেখা।
ওয়াশ পদ্ধতিঃ
- সোপ-ফ্রি ক্লিনজার দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন।
- নন-এয়ারকন্ডিশন্ড ঘরে ঘন্টাখানেক বিশ্রাম নিন।
- এরপর ত্বকের টি-জোন এবং সি-জোনে পৃথকভাবে টিস্যু প্যাট করে নিন।
- টিস্যুগুলোর অবস্থা খুব ভালো করে পর্যবেক্ষন করুন।
ফলাফলঃ
- যদি টি-জোন এবং সি-জোন উভয় অংশেই টিস্যু প্যাট করার সময় আটকে যায় এবং টিস্যুতে তৈলাক্তভাব পরিলক্ষিত হয় তবে আপনার ত্বক অয়েলি বা তৈলাক্ত।
- যদি আপনার ত্বকে টিস্যু আটকে না যায় এবং টি-জোন ও সি-জোনে প্যাট করা টিস্যুতে খুব বেশী পরিবর্তন পরিলক্ষিত না হয় তবে আপনার ত্বক নর্মাল বা স্বাভাবিক।
- যদি টি-জোনের টিস্যুতে তৈলাক্তভাব এবং সি-জোনের টিস্যুতে শুষ্কভাব পরিলক্ষিত হয় তবে আপনার ত্বকের ধরন মিশ্র।
- যদি আপনার ত্বকের টি ও সি জোনের টিস্যুতে কোনো তৈলাক্ত ভাব পরিলিক্ষিত না হয়, ত্বক স্ট্রেচি হয় তবে আপনার ত্বক ড্রাই বা শুষ্ক।
ডে-টেস্টঃ
- সকালে মুখ সোপ-ফ্রি কোনো ক্লিনজার দিয়ে ধুয়ে নিন।
- মুখ স্বাভাবিকভাবে শুকিয়ে নিন।
- সারাদিন ত্বকে সবধরনের প্রসাধণি ব্যাবহার থেকে বিরত থাকুন।
- দিনের শেষে ত্বকের বর্তমান অবস্থার সাথে, ত্বকের ধরন সম্পর্কিত নির্দিষ্ট লক্ষন গুলো মিলিয়ে নিন।
ফলাফলঃ
- স্বাভাবিক ত্বকের ক্ষেত্রে, মুখে তৈলাক্ত বা শুষ্ক ভাব দেখা যাবেনা। ত্বক হবে নরম ও কোমল।
- তৈলাক্ত ত্বকের ক্ষেত্রে মুখে তৈলাক্তভাব পরিলক্ষিত হবে এবং স্পর্শ করলে চটচটে ভাব অনুভুত হবে।
- শুষ্ক ত্বকের ক্ষেত্রে স্পর্শ করলে ত্বক রুক্ষ মনে হবে, একধরনের টান-টান অনুভুতি হবে।
- মিশ্র বা কম্বিনেশন ত্বকের ক্ষেত্রে টি-জোন তৈলাক্ত এবং সি-জোন স্বাভাবিক মনে হবে।
মিরর পদ্ধতিঃ
- প্রথমে মুখ ভালোভাবে ক্লিন করে নিন।
- কোনো রকম প্রসাধনী ব্যবহার ছাড়াই এক ঘন্টা অপেক্ষা করুন।
- এক ঘন্টা পর আয়নার খুব কাছাকাছি গিয়ে ত্বক খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করুন।
ফলাফলঃ
- যদি আপনার সমস্ত মুখে বড় এবং সুস্পষ্ট লোমকূপ বা পোরস দেখতে পান তাহলে বুঝবেন আপনার ত্বক, তৈলাক্ত ত্বক। কারণ তৈলাক্ত ত্বকে সিবেসিয়াস গ্ল্যান্ড থেকে প্রচুর পরিমাণে তেল বা সেবাম নিঃসরণ হয়। যে কারণে ত্বকের লোমকূপ বা পোর্সগুলো স্বাভাবিকের তুলনায় বড় এবং সুস্পষ্ট হয়।
- যদি সমস্ত মুখে কোনো সুস্পষ্ট লোমকূপ বা পোর্স দৃষ্টিগোচর না হয় বরং মুখে খসখসে ভাব দেখা যায়, মুখে খুব সরু সরু ভাজ দেখতে পাওয়া যায় এবং মুখের যেকোনো এক্সপ্রেশনের কারণে একটা টানটান ভাব অনুভুত হয় তাহলে বুঝবেন আপনার ত্বক শুষ্ক ত্বক।
- যদি আপনার মুখের টি জোনের অংশটুকুতে সুস্পষ্ট এবং বড় পোর্স দেখা যায় এবং সি জোনে কোনো লোমকূপ চোখে না পড়ে তাহলে আপনার ত্বক হলো মিশ্র ত্বক।
টিস্যু টেস্ট বা টিস্যু ব্লটিং পদ্ধতিঃ
এছাড়াও সেনসেটিভ ত্বক নামে আরেক ধরনের ত্বকের কথা শোনা যায়। কিন্তু এটি ত্বকের কোনো ধরন নয়, ত্বকের একটি বিশেষ অবস্থা মাত্র। স্বাভাবিক, শুষ্ক অয়েলি স্কিনও অনেকসময় সেনসিটিভ বা সংবেদনশীল ত্বক হয়ে উঠতে পারে। সেনসেটিভ ত্বক অন্বক বেশী পাতলা হয়, ত্বকে লালচে আভা ও ইরিটেশন হয়।
সতর্কতাঃ
ত্বকের ধরন সবসময় একইরকম থাকেনা। কারন সময়ের সাথে সাথে মানুষের ত্বকের ধরন নানাবিধ কারনে বদলে যেতে পারে। তাই প্রতি ঋতু পরিবর্তনের সময় একবার ত্বকের ধরন পরীক্ষা করে নেয়া ভালো ।
তথ্যসুত্রঃ
উইকিপিডিয়া,