আমরা যখন কোন কসমেটিকসের দোকানে যাই তখন দোকানের শত শত প্রসাধনীর ভিড়ে প্রায়ই নিজেকে হারিয়ে ফেলি!

ঠিক বুঝে উঠতে পারি না কোনটা রেখে কোনটা কিনবো! তখন সঙ্গে থাকা বান্ধবী কিংবা দোকানীর পরামর্শে কিংবা অনেক সময় প্রসাধনীর প্যাকেজিংইয়ে আকৃষ্ট হয়ে আমরা প্রোডাক্টটি কিনি।

কিন্ত ডার্মাটোলজিস্ট বা বিউটিশিয়ানদের মতে আমরা ভুল করছি, না বুঝে ত্বকের ক্ষতি সাধন করছি! ডার্মাটোলজিস্ট বা বিউটিশিয়ানরা ত্বকের যত্নে সঠিক প্রসাধনী নির্বাচনের ক্ষেত্রে কতগুলো বিষয়কে বিবেচনায় নিতে বলেন।

তাহলে চলুন আমরা সেই বিষয়গুলি সম্পর্কে আমরা একটু জেনে নেই।

ত্বকের যত্নে সঠিক প্রসাধনী কিভাবে কিনবেন

ত্বকের ধরন নির্ণয় :

ত্বকের যত্নে সঠিক প্রসাধনী নির্বাচন করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হল নিজের ত্বকের ধরন সম্পর্কে জানা। কারন আমাদের স্কিন কনসার্ন গুলো বিবেচনায় নিয়েই প্রসাধনী সামগ্রী তৈরি হয়।

আর আমদের একেক রকম ত্বকের চাহিদাগুলি একেক রকম। কাজেই আমরা যদি ত্বকের ধরন না জেনে প্রসাধনী কিনি তা হবে অনেকটা নাপা খেয়ে পেট খারাপের চিকিৎসা করার মতো ব্যাপার।

তৈলাক্ত ত্বকে পানির চেয়ে তেলের পরিমাণ বেশি।তৈলাক্ত ত্বকের ক্ষেত্রে অয়েল ফ্রী(নির্দিস্ট কিছু অয়েল ব্যতিত) এবং নন- কমেডোজেনিক প্রসাধনী কেনার চেস্টা করুন।

চেষ্টা করুন জেল ধর্মী প্রসাধনী ব্যবহার করার। কারণ জেলের বেশির ভাগটাই পানি। শুষ্ক ত্বকে পানি ও তেল উভয়েই কম পরিমানে থাকে। তাই শুষ্ক ত্বকের তেলও পানির উপাদান যুক্ত প্রসাধনী কেনার চেষ্টা করুন।

শুষ্ক ত্বকের প্রসাধনীতে শুধুমাত্র তেল বা পানি যুক্ত উপাদানগুলি যুক্ত করলেই হবে না পানি যেন বাষ্পীভূত হয়ে উড়ে যেতে না পারে সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।

এক্ষেত্রে শুষ্ক ত্বকের সবচেয়ে ভাল বন্ধু হল ময়েশ্চারাইজার।কারন ময়েশ্চারাইজার ত্বক থেকে পানি বের হুয়ে যেতে দেয় না।

সংবেদনশীল ত্বকের ক্ষেত্রে কৃত্তিম রঙ, গন্ধ বা ক্ষতিকারক রাসায়নিক উপাদান মুক্ত প্রসাধনী কেনা উচিত। ক্রয়ের পূর্বে নিশ্চিত হয়ে নিন প্রসাধনীটিতে ত্বকের চুলকানি,লালচে ভাব ও জ্বালা-পোড়া দূর করার উপাদান আছে কিনা।

আর মিশ্র ত্বকের ক্ষেত্রে- তৈলাক্ত অংশে তেল দূর করার ও শুষ্ক অংশে শুষ্কতা দূর করার উপাদান সমৃদ্ধ প্রসাধনী কেনা উচিৎ।

ইনগ্রিডিয়েন্টস :

ত্বকের যত্নে প্রসাধনী কেনার ক্ষেত্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হল এর ইনগ্রিডিয়েন্টস লিস্ট চেক করা। ইনগ্রিডিয়েন্টস হল প্রসাধনী তৈরিতে ব্যবহৃত উপাদান সমুহ।

প্রতিটি প্রসাধনীর গায়ে কিংবা ওয়েবসাইটে এর ইনগ্রিডিয়েন্টস লিস্ট থাকে।তাই প্রসাধনী কেনার পূর্বে দেখে নিন এর ইনগ্রিডিয়েন্টস লিস্টে আপনার ত্বকের জন্য প্রয়োজনীয় ইনগ্রিডিয়েন্টসটি আছে কিনা।

আমরা পুরো ইনগ্রিডিয়েন্টস লিস্ট পড়ার কথা বলবো। আর যদি সময়ের অভাবে পুরো ইনগ্রিডিয়েন্টস লিস্ট পড়ে নিতে না পারলে অবশ্যই প্রথম পাঁচটি ইনগ্রিডিয়েন্টস চেক করে নিবেন।

কারন প্রথম পাঁচটি ইনগ্রিডিয়েন্টস-ই প্রসাধনীতে বেশি পরিমাণে থাকে এবং অনেক সময় প্রসাধনীর মূল উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয়।

তৈলাক্ত ত্বকের প্রসাধনী কেনার ক্ষেত্রে নিশ্চিত হয়ে নিন এর ইনগ্রিডিয়েন্টস লিস্টে যেন স্যালিসাইলিক এসিড, বেনজাইল-পার-অক্সাইড, গ্লাইকোলিক এসিড, ট্রি ট্রি অয়েল,বিভিন্ন রকমের ক্লে, হায়ালুরনিক এসিড,রেটিনল,নিয়াসিনামাইড ইত্যাদি থাকে।তবে ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত রেটিনল ব্যবহার করা ঠিক নয়।

Shop with Water Lotus

শুষ্ক ত্বকের প্রসাধনী কেনার ক্ষেত্রে নিশ্চিত হয়ে নিন এর ইনগ্রিডিয়েন্টস লিস্টে যেন গ্লিসারিন,হায়ালুরনিক এসিড,সিরামাইড, ভ্যাসলিন, পেট্রোলিয়াম,ইউরিয়া,নারিকেল তেল, ল্যাকটিক এসিড, সেহা বাটার, ভিটামিন ই , জোজবা, আর্গান, অ্যাভাকেডো সহ নানারকমের তেল  থাকে।

সংবেদনশীল ত্বকের প্রসাধনী কেনার ক্ষেত্রে নিশ্চিত হয়ে নিন এর ইনগ্রিডিয়েন্টস লিস্টে যেন অ্যান্টি অক্সিডেন্ট,অ্যালোভেরা,ওটস এক্সট্রাক্ট,প্যানথেনল,নিয়াসিনামাইড, কিউকাম্বার সিড অয়েল, উইচহেজেল,বিসাবলস,বিটা গ্লুকেন ইত্যাদি থাকে।

আর নরমাল স্কিনের ক্ষেত্রে আপনার ত্বকে পানি ও তেলের পরিমাণগত ভারসাম্য ঠিক রাখবে এমন উপাদান যুক্ত প্রসাধনী কিনুন।এক্ষেত্রে ক্রয়কিত প্রসাধনীতে যেন  নিয়াসিনামাইড,হায়ালুরনিক এসিড,ভিটামিন সি, গ্লাইকোলিক এসিড,ফ্যাটি এসিড,ডাইমেথিকোন ইত্যাদি থাকে তা খেয়াল করুন।

মেয়াদ উত্তীর্ণ তারিখঃ

প্রসাধনী কেনার ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রোডাক্টটির মেয়াদ উত্তির্নের তারিখ দেখে নিতে ভুলবেন না। মেয়াদ উত্তীর্ণ প্রসাধনী ত্বকে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া তথা রোগ-জীবাণুর সংক্রমণ বাড়িয়ে তোলে।ফলে ত্বকে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।

প্রতিটি প্রোডাক্টের গায়ে এর মেয়াদ উত্তির্নের তারিখ থাকে। তবে ইউরোপের ক্ষেত্রে যেসব প্রোডাক্টের মেয়াদকাল ৩০-মাসের অধিক সময় সেইসব প্রোডাক্টের গায়ে সরাসরি মেয়াদ উত্তির্নের তারিখ না থেকে PAO  সিম্বল যুক্ত সময়কাল থাকে।যেমন- @ PAO  6 M।এর মানে হচ্ছে প্রোডাক্টটি খোলার ৬ মাস পর্যন্ত আপনি এটি ব্যবহার করতে পারবেন।এইসব প্রোডাক্টের ক্ষেত্রেও দোকানদের কাছ থেকে এর উৎপাদন তারিখ জেনে নিতে ভুলবেন না।উৎপাদন তারিখের সাথে ৩০-মাস যোগ করলেই এর মেয়াদ উত্তির্নের তারিখ সম্পর্কে আমরা একটি ধারনা পেয়ে যাব।

Product choose-Patch-test-allergy

প্যাচ টেস্ট :

প্রসাধনী কেনার পূর্বে অবশ্যই প্রোডাক্টটির প্যাচ টেস্ট করা উচিৎ। অর্থাৎ সামন্য পরিমাণ প্রসাধনী হাতের কব্জির উপর কিংবা কানের লতিতে প্রয়োগ করে মিনিমাম ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

যদি এই সময়ের মধ্যে আমদের ত্বকে কোন অ্যালার্জি,লালচে ভাব,জ্বালা-পোড়া কিংবা কোন পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত না হয় তবে নিশ্চিন্তে আমরা প্রসাধনীটি ব্যবহার করতে পারি। আর ন্যূনতম পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া দেখালেও প্রোডাক্টটি আমদের ব্যবহার করা উচিৎ নয়।

তথ্যসুত্র:  https://www.realsimple.com/beauty-fashion/skincare/how-to-choose-skin-care-products

https://www.femina.in/beauty/skin/how-to-choose-your-skincare-products-an-expert-guide-157344-4.html