আমাদের প্রত্যকের ত্বকের ধরন আলাদা। আর ত্বকের ধরন গুলি আলাদা হওয়ার কারণগুলোও কিন্তু আলাদা; ফলে আমাদের ত্বকের চাহিদা গুলোও আলাদা অর্থাৎ একেক রকম ত্বকের যত্ন নিতে হবে আমাদের একেকভাবে।

তাহলে চলুন ধরন অনুযায়ী আমরা কিভাবে ত্বকের যত্ন নিবো তা জেনে নেই।

ধরন অনুযায়ী ত্বকের যত্নঃ

আমাদের ত্বকের ধরন মূলত ৪টি। নরমাল বা স্বাভাবিক, অয়েলি বা তৈলাক্ত, ড্রাই বা শুষ্ক, কম্বিনেশন বা মিশ্র। এখন এই ৪ ধরনের ত্বকের মধ্যে আমার বা আপনার ত্বকের ধরন কোনটি হবে তা মূলত নির্ভর করে আমাদের ত্বকে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত তেল ও পানির উপস্তিতির পরিমাণগত ভারসাম্যের উপর। কাজেই তেল ও পানির কথা মাথায় রেখেই আমাদের সকল প্রকার ত্বকের যত্ন নিতে হবে। আমাদের সকল প্রকার ত্বকের যত্নের উদ্দেশ্যই হচ্ছে একটি ওয়েল-ব্যালেন্সেড ত্বক অর্জন করা।

নরমাল বা স্বাভাবিক ত্বকঃ 

নরমাল বা স্বাভাবিক ত্বকে আমাদের ত্বকের জন্য প্রয়োজনীয় যে পরিমাণ পানি বা তেল থাকার কথা, সেই পরিমান পানি বা তেল–ই থাকে। ফলে ত্বকে অতিরিক্ত তৈলাক্ত বা শুষ্ক ভাব থাকে না, ত্বক দেখতে নরম, কোমল ও মসৃণ হয়। ত্বকের ফাইন লাইনস ও পোরস গুলো খুবই চমৎকার হয়। আদতে নরমাল বা স্বাভাবিক ত্বকের অধিকারীগন সবচেয়ে ভাগ্যবান। কারন এই ধরনের ত্বকে ত্বক সংক্রান্ত সমস্যা গুলো তুলনামূলক কম হয়। ডার্মাটোলজি বা চিকিৎসা বিজ্ঞানেও নরমাল বা স্বাভাবিক ত্বকটাই সুস্থ ত্বকের মাপকাঠি হিসেবে বিবেচিত হয়। 

ধরণ অনুযায়ী ত্বকের যত্ন নিবেন কিভাবে!

আসলে আমাদের সকল প্রকার ত্বকের যত্নের উদ্দেশ্যই হচ্ছে নরমাল বা স্বাভাবিক ত্বকে ফেরত আসা। তবে যত্নের অভাবে নরমাল বা স্বাভাবিক ত্বক ও অনেক সময় শুষ্ক বা সংবেদনশীল ত্বক হয়ে উঠতে পারে।

তাই নরমাল বা স্বাভাবিক ত্বকের জন্যও আমাদের নিয়মিত যত্ন নিতে হবে, খেয়াল রাখতে হবে এর যত্নে আমরা যে প্রসাধনী ব্যবহার করছি তাতে যেন পানি আর তেলের পরিমাণগত ভারসাম্যটা  ঠিক থাকে।

এই ক্ষেত্রে আমরা ক্রীমজাতীয় প্রসাধনী ব্যাবহার করতে পারি। কারন কারন ক্রীমে তেল ও পানির পরিমানের একটি তুলনাগত ভারসাম্য বজায় থাকে।

অয়েলি বা তৈলাক্ত ত্বকঃ

তৈলাক্ত ত্বকে আমাদের ত্বকের জন্য যে পরিমানে পানি বা তেলের ভারসাম্য থাকার কথা, ঠিক সেই পরিমানে থাকে না। অর্থাৎ তৈলাক্ত ত্বকে পানির চেয়ে তেলের পরিমানটা বেশি থাকে। কারন আমাদের তৈল গ্রন্থি প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি তেল নিঃসরণ করে। ফলে মুখে একধরনের তৈলাক্ত ও চিটচিটে ভাব থাকে, লোমকুপ গুলো অনেক বড় ও সুস্পষ্ট হয়। অনেকসময় ধুলাবালি আটকে লোমকূপ বন্ধ হয়ে যায়।

এই বন্ধ লোমকূপে জীবাণুর সংক্রমণে অনেক সময় পিম্পল, হোয়াইট হেডস, ব্ল্যাক হেডস এবং ব্রণ বা একনে হয়। এই অবস্থা থেকে বাঁচার জন্য চাই তৈলাক্ত ত্বকের নিয়মিত পরিচর্যা। আর তৈলাক্ত ত্বকের পরিচর্যার মূল চ্যালেঞ্জ/কৌশল হল ত্বকের অতিরিক্ত তেল নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে ত্বকে পানি ও তেলের পরিমাণ গত ভারসাম্যটা ফিরিয়ে আনা।

এই ক্ষেত্রে আমরা জেল জাতীয় প্রসাধণী ব্যাবহার করতে পারি। কারন জেলে পানির পরিমাণ বেশী। একই সংগে খেয়াল রাখতে হবে আমাদের ব্যবহৃত প্রসাধনী গুলো যেন নন-কমেডোজেনিক এবং সেবাম বা ত্বকের তেল নিয়ন্ত্রণকারী উপাদান যুক্ত হয়। নন-কমেডোজেনিক মানে হল-যা আমাদের লোমকূপগুলি বন্ধ করে ব্রনের উদ্রেক ঘটাবে না।

ধরণ অনুযায়ী ত্বকের যত্ন নিবেন কিভাবে!

ড্রাই বা শুষ্ক ত্বক:

শুষ্ক ত্বকে তেলের পরিমাণ যেমন কম থাকে, ঠিক তেমনি পানির পরিমাণও কম থাকে। তবে পানির পরিমানটা অনেক বেশি কম থাকে। ফলে ত্বক রুক্ষ- খসখসে,লাবণ্যহীন ও অনুজ্জ্বল দেখায়, খুব সহজেই বয়সের বলিরেখা দেখা দেয়। শুষ্ক ত্বকে  খুব সহজেই ক্র্যাক বা ফাটল ধরে, ফলে জীবাণুর আক্রমণটা সহজ হয়। তবে ত্বকের এ শুষ্কতা পানির অভাবে হয় না বরং ত্বকের কোষগুলির পানি ধরে রাখতে পারার গাঠনিক ত্রুটির কারণে হয়ে থাকে। অর্থাৎ আমাদের ত্বকের পানি রক্ষাকারী দেয়ালগুলি দুর্বল।

তাই তা পানি ধরে রাখতে পারে না। আর দেয়ালগুলি দুর্বল হওয়ার কারন হল আমাদের তৈল গ্রন্থিগুলির প্রয়োজনীয় পরিমান তেল সরবরাহ করতে না পারা। কাজেই শুষ্ক ত্বকের যত্নে আমাদের এমন প্রসাধনী চুজ কতে হবে যা একই সঙ্গে তেল ও পানির যোগান দিতে পারে। এই ক্ষেত্রে আমরা  জন্য লোশন বা তেল জাতীয় প্রসাধনি ব্যাবহার করতে পারি। কারণ লোশনে তেলের তুলনায় পানির ভাগ বেশি থাকে।

Dey skin cosmetics ingredients

মিশ্র ত্বকের ক্ষেত্রে মুখের টি-জোন মানে কপাল নাক ও থুতনীর অংশ তৈলাক্ত থাকে আর সি-জোন মানে গাল, মুখ বা চোখের পার্শ্ববর্তী অংশ শুষ্ক থাকে। মিশ্র ত্বকের ক্ষেত্রে শুষ্ক অংশে লোশন এবং তৈলাক্ত অংশে ক্রীম জাতীয় প্রসাধনী ব্যাবহার করা উচিত।

ধরণ অনুযায়ী ত্বকের যত্ন নিবেন কিভাবে!

এছাড়াও সংবেদনশীল ত্বক নামে এক ধরনের ত্বকের কথা শুনা যায়। কিন্তু এটি ত্বকের কোন ধরন নয়, এটি ত্বকের একটি বিশেষ অবস্থা মাত্র। শুষ্ক, স্বাভাবিক, তৈলাক্ত ত্বকও অনেক সময় সংবেদনশীল হয়ে উঠতে পারে সঠিক পরিচর্যার অভাবে। সংবেদনশীল ত্বক অনেক বেশি পাতলা হয়, ত্বকে লালচে আভা ও ইরিটেশন হয়। সংবেদনশীল ত্বকের যত্নে এর প্রসাধনীর উপাদানগুলিতে আমাদের অ্যালকোহল, কৃত্তিম রঙ, গন্ধ বা ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থগুলিকে বর্জন করা উচিৎ।

Shop with Water Lotus

তথ্যসুত্র: https://www.neutrogena-me.com/beauty-and-skincare-tips/skincare/how-to-take-care-of-different-skin-types

https://www.webmd.com/beauty/whats-your-skin-type#2-8